ছড়াসমগ্র
ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ
খাঁচা
জীবন-হিসাব ‘ডাউনে’ই আছে
‘লক’ উঠে গেছে তাই
কী হবে তুচ্ছ জীবন দিয়ে
জীবিকা যদি না পাই!
জীবন তো নয় জীবিকা প্রধান
শ্রমিক ছোটে শহরে
ক্ষুদ্র জীবন গেলেই বা কি
গতি থাক পুঁজি বহরে।
মালিক যদি না বাঁচে তবে
কী লাভ শ্রমিক বাঁচায়
এভাবে ওরা কথার প্যাঁচে
মৃত্যু শীতল খাঁচায়।
যানজট
যানজটে নাজেহাল
পরিতোষ ঠাকুরে
কী যে হবে ভাবনা
ছাপোষা চাকুরে।
টংগিতে বাড়ি তার
অফিসটা মতিঝিল
রাক্ষুসে জট-পথ
সময় কি হয় মিল!
তাই রোজ ভোরে ভোরে
বাড়ি হয় ছাড়তে
টাইম মত পৌঁছবে
চায় না সে হারতে।
যদি তার কোনো দিন
হয়ে যায় কিছু লেট
সাহেবের কাছে ঠিক
মাথা তার হবে হেট।
চায় যেতে প্রতিদিন
খুব খুশি মনটায়
যদিও পৌঁছবে ঠিক
সাড়ে তিন ঘন্টায়।
মুক্তি খুঁজি
স্বাধীনতার মানে যদি
হয় মুক্তি
তবে আমরা স্বাধীন কী না
দাও যুক্তি!
জনগণকে ভাগ করছে
রাজনীতির সব নায়করা
নিত্য করেন বেসুরো গান
সেয়ানা সব গায়করা।
দেশের যত আম জনতা
খুব সাধারণ জনগণ
বুঝতে চাবেন নেতারা কি
সত্যি কেমন জনমন?
নেতার সকল কাজ-অকাজে
নাম ভাঙ্গাচ্ছে মানুষের
ঘোলটা রেখে মাখন মুখে
শব্দ ছড়ায় ফানুসের।
তাইতো বলি মুক্তি কোথায়
হচ্ছে শহীদ লাঞ্ছিত
বিজয় দিনে মুক্তি খুঁজি
যা ছিল খুব বাঞ্ছিত।
ইচ্ছেমতির পাখি
সকালে যাই ইস্কুলেতে
ফিরতে বাজে বারো
আমি এখন ক্লান্ত কি না?
এসব কথা ছাড়ো।
ড্রইং রুমে অংক টিচার
চশমা বেজায় পুরু
ঠোঁটের ভাঁজে হাসি তো নেই
রাশভারি এই গুরু।
টিচার যেতেই খাওয়ার সময়
ঘড়ি মেপেই চলা
নিজের কোনো সাধের কথা
হয় না আমার বলা।
বিকেল বেলা বাংলা টিচার
সময় মেপে চলেন
রাশভারি নন মাঝে মাঝে
গল্প কথা বলেন।
আমি ভাবি আমার কথা
খেলার সময় কই!
গভীর মনে ভেবে দেখি
সব কেড়েছে বই।
তারচে ভালো হতাম যদি
টোকাই মেয়ে শাখি
ডানা মেলে হতাম তখন
ইচ্ছেমতির পাখি।
আমার বাবা
লকডাউনে ঘরে সাহেব
বাবার ছুটি নাই
অফিস খোলা, সাফ-সুতরো
তার যে থাকা চাই।
বিষ্টিতে পথ খাল হয়েছে
সাঁতরে যাবেন বাবা!
নিয়ম মত পৌঁছতে হবে
তোমরা কি আর যাবা!
এই বাবারই বয়ান আমি
আজ আসরে বলি
গল্প বলার আদেশ দিল
খ্যাপাটে বোন মলি।
* * * *
বাদুর ঝোলেন বাসে বাবা
রোজ বিকেল ও সকালে
লোকে বলে জানটা নাকি
দেবেন তিনি অকালে।
কলম পেষেন মতিঝিলে
সস্তা কাঠের টেবিলেে
আধেক টাকা কাটা পড়ে
প্রতি মাসের পে-বিলে।
লোকে বলে বাবার ঘাড়ে
অনেক নাকি বোঝা
তাতে দেখ মাথাটা তার
ঘাড়ের নীচে গোজা।
তবু বাবা গর্ব করেন
সরকারী এক চাকুরে
জীবনটাতো বেঁচেই যাবে
বট নয়তো পাকুড়ে।
জয় রাজারই জয়
বিদ্বজজন মন্দ ভারি
হীরক রাজার কথা
এসব এখন মান্য করা
রাজা-রাণীর প্রথা।
শিক্ষালয়ের গুরু যারা
চলবে কথা রাজার
বিদ্যালয়ে বিদ্যা কেন
বসুক হাট ও বাজার!
ধরে ধরে গুরু বানাও
রাজার কথায় নত
লেখা পড়ার ধার ধারি না
জয়ধ্বনীই ব্রত।
জয় রাজারই জয়
শূন্য কলস তবুও নেই
একটুখানি ভয়!
গ্যাস বৃত্তান্ত
একটা সময় শুনেছিলাম
মাটির নীচে রেখে জমা
লাভ কি হবে বল?
ঘরে ঘরে গ্যাস চলে যাক
ঘোরা গ্যাসের কল।
ভাসছি গ্যাসে ভাবনা কী আর
গ্যাসে চালা গাড়ি
অল্প দামে চলতে পারিস
সুখে যাবি বাড়ি।
কিন্তু এখন হায় হাহাকার
খনির তলা ফাঁকা
এখন কি আর যায়গো রাখা
শাক দিয়ে মাছ ঢাকা!
দাম বাড়ে রোজ, গ্যাস ক্রেতাদের
হচ্ছে পকেট খালি
পকেট ভারি গ্যাস-নেতাদের
থাক না মুখে কালি।
বাঁ হাতেরই কারসাজিতে
ডুবলো তিতাস দ্যাখ
এসব কথা যায় না বলা
মনের স্লেটে লেখ।
আমি বোধ হয় আমি নই
এখন শুধু ভাবনা আমার
আমি কারো বন্ধু হই?
কিংবা আবার এটা তো নয়
আমরা সবাই বন্য
বনের প্রাণি বুনো সবাই
করছে কে আর গণ্য!
স্বভাব তাদের মেলে বেশি
হায়না কিংবা বাদর
বাদর নাচায় যে হনুমান
তার কাছে পাই আদর।
এই জনতা আমরা সবাই
খুব সাধারণ পণ্য
ভদ্র সমাজ নেই আমাদের
আমরা তো নগণ্য।
জ্বলে আগুন বাজারে আর
গ্যাস কেন ভাই চাওয়া,
ভদ্রলোকের সওদা এসব
তোদের আবার খাওয়া!
পয়সা কোথায় কিনবে পানি
বাড়ছে শুধুই বিল
নালা ডোবার জল কি খারাপ
এতেই জুড়াও দিল!
দেশের চালক ভদ্র সমাজ
কলজে ছিড়ে খাবে
বুকের ভেতর কলজে তো নেই
তবুও বেঁচে যাবে!
মন্ত্রী দিলেন বাণী
মন্ত্রী দিলেন বাণী
তাঁর কথাটাই মানি।
দেশটা তো ভাই হচ্ছে ধনী
দাম বাড়া এর লক্ষণ
ভর্তা ভাজির বদলে কর
কোরমা পোলাও ভক্ষণ।
গরীব মানুষ এখন নাকি
দু বেলা খায় পেট ভরে
নাদান সবাই হল্লা করে
বুঝবে পরে লেট করে।
ভুলছো কেন অমোঘ কথা
‘অল্প খেলে বাড়ে বল’
জানো না কি অধিক খেলে
‘যাবে তুমি রসাতল!’
তারচে সবাই দেশবিধাতার
জয়ধ্বনীই কর
কন্ঠ চড়াও স্লোগান বাড়াও
বাঁচ কিংবা মর।
মন্ত্রী দিলেন বাণী
তাঁর কথাটাই মানি।
তেলেপাখি
তেলেপোকার তেলেসমাতি কাণ্ড
আলমারিতে রাখা তেলের ভাণ্ড।
খাচ্ছে করে হাপুশ হুপুশ শব্দ
আমরা সবাই এক্কেবারে জব্দ।
তুই তোরে ভাই সামান্য এক পোকা
তাতেই দিলি এত্তবড় ধোঁকা!
ধমকে বলে দিব্বি আমি পাখি
পোকা বলে দিচ্ছ কেন ফাঁকি।
পাখার জোরেই গর্ব তেলেপোকার
দেশটাতো ভাই স্বর্গ নাকি বোকার।
ঢেঁকি
এমন অনেক কথা আছে
জনসভায় শোভা পায়
কিন্তু ওরা বাইরে এলেই
আমার তোমার ভাগ্য খায়।
চরিত্রতে পাপুল-সাহেদ
দেখতে ছিল খুব কালো
ছায়াতরু মাথায় এসে
রূপ চেহারা খুব ভালো।
ওদের পাশে নেতা-হাতা
দরদ যেন বুকভরা
সুখপাখিটা ওদের নাকি
ওদের তরেই বুক-করা।
কিন্তু হঠাৎ চাঁদে রাহু
জোয়ারে দেয় টান
জোয়ার তো নয় দেখ কেমন
মরা নদীর বান।
নেতা দেখে মন্দ বরাত
আর চিনে কি লাভ
করছে দলে ‘অনুপ্রবেশ’
করবো কেন মাপ?
এক গোত্রেই বসত এদের
ভোল বদলের রাজা
এদের হাতে দেশের মানুষ
পেলো শুধু সাজা।
কিন্তু বল হৃদয়টা কি
চকবাজারের পণ্য
সব জেনেও ওদের আমি
কেমনে করি ধন্য!
বাবা
বাদুর ঝোলেন বাসে বাবা
রোজ বিকেল আর সকালে
লোকে বলেন জানটা নাকি
দেবেন তিনি অকালে।
কলম পেষেন মতিঝিলে
সস্তা কাঠের টেবিলে
আধেক টাকা কাটা পরে
প্রতি মাসের পে-বিলে।
লোকে বলে বাবার ঘাড়ে
অনেক নাকি বোঝা
তাতে নাকি মাথাটা তার
ঘাড়ের নিচে গোজা।
তবু বাবা গর্ব করেন
সরকারী এক চাকুরে
জীবনটা তো বেঁচেই যাবে
বট নয়তো পাকুড়ে।
একটি ছেলে
মায়ের বড় আদুরে ধন
বুকের মানিক খোকা
সে যে মোদের শেখ মুজিবর
বুঝিসনি রে বোকা!
একটু একটু বেড়ে ওঠে
ডানপিটে সেই ছেলে
কিশোর দলের নেতা হয়ে
চলছে হেসে খেলে।
লেখাপড়ায় খুব মনোযোগ
স্কুলে যায় রোজ
খেলার মাঠে সবার আগে
পরে যে তার খোঁজ।
অন্যায় যে করে তারে
দেয় না কোনো ছাড়
প্রতিবাদে এই খোকাটির
হয় না দেখ হার।
শেখ মুজিবর বড় হয়ে
হলো সবার নেতা
আর কারো কী সাধ্য আছে
টপকে তাঁকে জেতা?
পাকিস্তানি দস্যুগুলোর
মনে জাগে ভয়
কী করে যে ঠেকানো যায়
শেখ মুজিবের জয়!
স্বাধীন দেশের জন্ম দিল
কেউ বোঝেনি কি তা?
তিনিই হলেন প্রাণের প্রিয়
মোদের জাতির পিতা।
রক্ষাগুরু
চোর ডাকাত আর বাটপারেরা
বুক ফুলিয়ে হাঁটেে
আমরা সবাই ভয়ে থাকি
কখন কাকে ছাটে।
দুর্নীতিবাজ লাটবাহাদুর
থোরাই কেয়ার করে
ওদের মাথায় ছায়াতরু
আর কারে সে ডরে।
রাজনীতি আর রাষ্ট্রনীতি
ওদের পকেট ভরা
কারণ, দেখ সবই আছে
শুধু, সুশাসনের খরা।
রক্ষকেরা হয় ভক্ষক
খুনে এখন ওরা
চোর-ছেচরের দোস্ত হলো
আমরা কপালপোড়া।
বিশাল বড় স্বপ্ন কথায়
আস্থা কি আর থাকে!
সাধারণের রক্ষাগুরু
বলি এখন কাকে?
লাফিয়ে ওঠে নায়েে
এই কথাটা লোকের মুখে
রটলো সারা গাঁয়ে।
চিতল মাছের পেটে নাকি
পেল চালের বোঝা
পুলিশ এসে চিতলটারে
থানায় নিল সোজা।
চালের চিতল চালবাজি খুব
ভীষণ রকম ধারি
গোবেচারা আমরা কি তার
ছল বুঝতে পারি!
একটু বাদে বড়বাবু
এসেই দিল সেলাম
চিতল বলে ঠিক আছে ভাই
আমি তবে গেলাম।
আবার নদীত দাপুটে সে
ঝলমলে তার বাড়ি
সবাই তাকে সেলাম দিলেও
ইলিশ দিল আড়ি।
ডাঙ্গার দোয়েল শীষ দিয়ে কয়
ঠিক করেছ ভায়া
আমিও ভাই মাড়াবো না
চিতল ব্যাটার ছায়া।
বিদেশ গিয়ে এক দুপুরে
লজ্জাতে মুখ ঢাকি
এক বিদেশি বলেই ফেলে
খুন করেছ নাকি?
হাতে পিতার রক্ত রেখা
খুব হয়েছে লাল
মনে পড়ে দুঃসহ সেই
পঁচাত্তরের কাল।
আজ আবারো ঢাকছি যে মুখ
স্বদেশ মাটিতেই
দ্বিধা নামে পথে এসে
একটু হাঁটিতেই।
মনে হলো তাবৎ নারী
হাত উঁচিয়ে বলে
ওই দেখ যায় পুরুষ প্রবর
ছুড়ো ডোবার জলে।
নয় এরা তো বাপ বেটা ভাই
কামুক কীটের দল
আস্থা তো নেই ওদের প্রতি
করছে কত ছল।
ছল নয়তো শক্তি-দাপট
নেতার হাতা ওরা
ছুটছে যেন বুনো শুওর
অথবা লাল ঘোড়া।
নেতার হাতে জয়
নেতার হাতে জয় আর নেতার হাতে ক্ষয়।
আমলারা সব দল বেঁধেছেন
যাবেন ফরেন ট্রিপে
যাহোক কিছু নোট লিখে দাও
শক্তি আছে ‘গ্রিফে’।
পুকুর কাটা মিড-ডে খাবার
কিংবা শপিং করা
জ্ঞানের বিন্দু সিন্ধু হবে
কাটাও মনের জরা।
পাছে লোকে যা বলে যাক
‘পাওয়ার’ আছে হাতে
গৌরিসেনের টাকা আছে
কার কি বলার তাতে?
মাথার ওপর নেতা আছেন
আর কি থাকি ভয়ে
নিন্দুকেরা নিন্দা করুক
তোমরা থাক জয়ে।
এই দেশেতে সবই হয়
নেতার হাতে জয় আর নেতার হাতে ক্ষয়।
ঘুষ সমাচার-১
এ কে এম শাহনাওয়াজ
জন্ম আমার এই মাটিতে
গর্ব করি আমি
ইচ্ছে তো হয় ঝর্না জলের
কিন্তু পাঁকে নামি।
ঘুষ খাবো না শপথ নিয়ে
ঢুকছি বড় কাজে
এসব শুনে ‘বস’ও দেখি
মরছে বেজায় লাজে।
“বলছে কী যে এই ছেলেটি
কার তালে যে নাচে
ঘুষও মজার খাদ্য বলো
না খেয়ে কেউ বাঁচে?”
ভাত না খেলে বাঁচবে তবু
ঘুষ না খেলে চলে?
স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার
ঘুষ খেতে ‘বস’ বলে।
সাপ স্বভাবের হিস হিসেরা
তুমি কর মূর্তি পূজা
ওটিই তোমার ধর্ম
আমি করি নামাজ রোজা
ধর্মীয় সব কর্ম।
তুমি আমি এক গাঁয়ে রই
এক হয়ে সব চলি
ভাই বন্ধুর মতই মোরা
মনের কথা বলি।
সাপ স্বভাবের হিস হিসেরা
ভাবে সবাই বোকা!
ধর্ম-লেবাস গায়ে দিয়ে
সবাইকে দেয় ধোকা।
হয়তো এরা মূর্খ ভীষণ
শিল্প বোঝে না যে
নয়তো ভীষণ চালাক চতুর
অসুর-দাপট কাজে।
রক্ত দামের দেশটিতে চায়
আঁধার ছুড়ে দিতে
আসুক দেখি ক্যামনে পারে
শান্তি কেড়ে নিতে!
লোকটা ভালো
লোকটা ভীষণ চটপটে
কথা তো নয় খটখটে
মাখন মাখা নরম
সুখ শান্তি পরম।
তিনি তো নন যেমন তেমন
খুব সাধারণ পণ্য
রাজনীতিতে ঘোরেল মানুষ
করছে সবাই ধন্য।
হঠাৎ একি শুনি সেদিন
যায় না তাকে পাওয়া
হাজার মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গেে
এক রাতে সে হাওয়া।
প্যাঁচারাম
প্যাঁচারাম প্যাঁচ জানে
চেলে দেয় ছক্কা
হরদম বেজে চলে
টরে আর টক্কা।
উসখুস চেহারা
মুখে কালো পর্দা
সেই মুখে কালি দেয়
ওপাড়ার বড়দা।
টেকো মাথা, তবু
টিকি গজালো
মেকআপে সেই খুঁত
একদিনে মজালো।
চালে তার চালবাজি
রাখা সব আড়ালে
মেরে দেব গাট্টা
এই সাঁকো নাড়ালে।
যেন তেন চাল নয়
সরকারী দেখ সব
প্যাঁচা কয় এই সবে
কেন তবে কলরব।
আমি কি নই ভাই
জনতার অংশ?
তবু কেন কও মোরে
খাদকের বংশ?
প্যাঁচা জানে পিছে তার
রাজনীতি শক্ত
বেলা শেষে হবে সব
প্যাঁচাদেরই ভক্ত।
ব্যাবসায় লালবাতি
কামাল আর ননীদের
প্যাঁচা হয় নেতা এই
শহরের ধনীদের।
সহি গণতন্ত্র
হিং টিং ছট হিং টিং ছট
জটা জুটধারি কাপালিক আসে
বসিয়া আয়েসে কমুণ্ডল পাশেে
আঁকি বুকি রেখা পায়ে।
ওম শান্তি ওম শান্তি
শান্তির জল ছিটিয়ে
আগমন বাণী ছড়িয়ে দেয়
কাড়া-নাকাড়া পিটিয়ে।
রুদ্রাক্ষের মালা যপ করে
পাঠ করে নানা মন্ত্র
আসবে এভাবে পূণ্যের স্রোত
ভেসে যাবে ‘ষড়যন্ত্র’!
সন্ন্যাসী প্রবর বলেন যাহা
সেগুলোই মহামন্ত্র
‘গণ’ না থাকলেও ‘তন্ত্র’ রয়েছে
তাই, এটিই সহি গণতন্ত্র!
একুশ এলেই
বুকটা কাঁপে বিষন্নতার সূক্ষ্ম ঘায়
ফুলের বোঝা সইতে কী আর পারে
বুকের ভেতর ঘা কি রে আর সারে!
প্রভাতফেরি হওয়ার কথা
সাতসকালের ভোরে
এখন কেমন হারিয়েছে
মধ্যরাতের ঘোরে।
এসব দেখে শহীদ মিনার
ডুকরে কেঁদে ওঠে
মধ্যরাতের ‘প্রভাতফেরি’
মনের ফুল কি ফোটে?
রাত থেকে যে মিছিল শুধুই আসে
মুখে মুখে সবাই ভালোবাসে
ভালোবাসার কথায় বুঝি প্রাণটা যায়
ভাষার মিনার এমন ভাষায় দুঃখ পায়।
ভাষার মিনার পায় না খুঁজে ভাষা
একটা দিনের কেমন ভালোবাসা!
ঘুষ সমাচার-২
যা এনে দাও তাতেই দেখ
উঠছে ভ্রু কুচকে
এটা এনে দেয় ওটা এনে দেয়
ছেলে বুড়ো আর পুচকে।
সবই ফেরান মুখ বেঁকিয়ে
পরোটা কাবাব সব্জি
ছিলেন তিনি খুব যে পেটুক
খেতেন ডুবিয়ে কব্জি।
বদ্যি ওঝা ফেল মারে সব
গালে হাত সব ভক্তের
হেমগ্লোবিন যাচ্ছে কমে
টকটকে লাল রক্তের।
হঠাত একি চাঙ্গা তিনি
মনটা বেজায় তুষ
খাবার ঘরে এলো যখন
গামলা ভরা ঘুষ।
আলতা রাঙা পা
লাল টুকটুক শাড়ি
না দিলে যে আড়ি
নতুন বৌয়ের একটা শুধু বায় না।
বেকার স্বামীর কী আর করা
শূন্য ট্যাকেই বাজারে তার আসা।
ওই ঝোলানো কাপড়টা খুব খাসা।
চোখ ভেসে যায় জলে
আপন মনেই বলে
খোদার কাছে চাইবো ক্ষমা পরে
শাড়ী নিয়ে সটকে পরার চেষ্টা করে
বমাল সমেত ধরা পড়ে।
হাটুরে কিল ঘারে
সইতে কি আর পারে।
দর দর দর যাচ্ছে ভিজে রক্তে সারা গা
চোখে ভাসে নতুন বৌয়ের আলতা রাঙা পা।
এলান এলো সরকারী
কান পেতে শোন আদেশনামা
মান্যকরা দরকারী।
করোনাটা শক্তি নিয়ে
খুব খ্যাপাটে থাকবে সে
মে মাসজুড়ে থাকবে দাপট
সত্যি মনে রাখবে যে।
ঘরের বাইরে বেরুবে না
স্বেচ্ছাতে ঘর-বন্দি
হোক না যত মন উচাটন
একটুও নয় সন্ধি।
কিন্তু একি, নতুন এলান
খুলবে দোকানপাট
ঘরের মধ্যে বন্দি রেখে
বাইরে কেন হাট?
না না না ভাবছো কেন
ঠিক এটা নয় খোলা
খুব বড় নয়, ‘সীমিত’ যে
বুঝলে আত্মভোলা!
দেশের ভালো বুঝতে গিয়ে
শিল্প মালিক খুশতো?
এই এলানে দোকান মালিক
দেখছো কেমন তুষ্ট।
হাভাতে সব আমজনতা
পঁচা আমের মত
করোনারা বন্ধু পাতাক
খোঁজ কি অতশত।
পতন
‘নেমে যাওয়া’ মানেটা কি নামা!
মাঝ পথে যায় নাকো থামা?
পতন ঘটতে লাগে একটি নিমেষ
যা কিছু ছিল পুঁজি শুরুতেই শেষ।
উত্থান নয় যেনো অতটা সোজা
মিছে হবে ঠিক গলিপথ খোঁজা।
মাঝে মাঝে থামতেও পারো,
উত্থানে গতি পাবে আরও।
সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট ভারি
কষ্ট করে বলে কেষ্ট তারই।
চট করে উঠে যাবে মগডাল গাছে
স্বপ্ন-কল্পনা এটি টের পাবে পাছে।
চূড়ায় উঠতে হলে সাধনা যতন
চেষ্টাহীন অলসের সহজ পতন।
ইতিহাস থেকে
বখতিয়ারের ঘোড়ার শব্দ কানে বাজে দামামা
তের শতকের গৌড়ে দাঁড়িয়ে
টাইম মেশিনের মুহূর্ত ম্যজিকেে
আচমকা আমি তুর্কি যোদ্ধা।
আম বাগানের ফাঁক ফোকর গলে
শূদ্র মিনতি দাসীর
মুখের বিস্ময় আছড়ে পড়ে
একুশ শতকের ডায়েরিতে।
টগবগে ঘোড়ায় সুবেশী
যোদ্ধা সওয়ার,
হাতে নাঙ্গা তলোয়ার
শিরোস্ত্রাণে ভয়ংকর দ্যুতি।
মিনতি দাসীর চোখের কালোতে
তবু নেই কোনো ভীতি।
গৌড় হারিয়ে গেছে লক্ষণাবতীর খোলসে
অনেক আগে।
এক চিলতে স্বস্তি পারেনি দিতে লক্ষণ সেন।
বল্লাল সেনের কৌলিণ্য ফ্রেমেে
আটকে গেছে মিনতি।
লক্ষণাবতীর মাটির দুর্গ প্রাকারে
বন্দি মিনতির আবাল্য স্বপ্ন।
অস্পৃশ্য হয়েছে…
নিজভূমে পরবাসী।
আম বাগানে বেড়ে ওঠে
কালো কীট,
পোকার অদৃশ্য দাঁত
জন্মের আগে কাটে ভ্রুণশিশু।
তাই লক্ষণাবতীর রূপান্তর
প্রত্যাশিত মিনতি দাসীর।
ব্রাহ্মণ রাজা তিলে তিলে
অস্পৃশ্য করেছে তাকে যুগে যুগে
হাজার অনুশাসন
ওষ্ঠাগত করেছে তার
জীবন প্রদীপ।
চাল বাড়ন্ত ঘরে
ম্রিয়মান-বড় একা মিনতি দাসী।
জীবনের দাবিতে
লক্ষণাবতীর রূপান্তর
শূদ্র মিনতির খুব জরুরি।
তুর্কি যোদ্ধা বেশে আমি
মুহূর্তে আপন হয়ে যাই
মিনতি দাসীর।
ঘরের চালার খড় উড়ে গেছে
বৈশাখী ঝড়ে
মাটির দেয়াল ধ্বসে গেছে অনেকটাই,
তবু কেমন নিকোনো উঠোন।
ঘরের দাওয়াতে আসন পাতায়
মিনতির দেরি হয় না এতটুকু।
মাটির হাড়ির তলায় পাওয়া যায়
মুড়ির মোয়ার ভাঙ্গা টুকরো।
ভিন দেশি ভিন ধর্মী ভিন ভাষী
তুর্কি যোদ্ধা
মুহূর্তে আপন হয়ে যায়।
ওই নাঙ্গা তলোয়ার
তবু ভাঙ্গে-চূরমার করে
লক্ষণাবতীর মাটির দেয়াল।
আপন হওয়ার আশ্বাসে
লখনৌতির আবাহন।
তুর্কি যোদ্ধা
মিনতি দাসীর
স্রোতের শ্যাওয়া তবু।
উজবুক সব
গণতন্ত্রের সেবক যারা
‘মানুষ’ তাদের চাই কি!
জনগণের পাশে তাদের
কক্খনো আর পাই কি!
দলের মানুষ লেজ নাড়া সব
তারাই জনতা
তাদের দিয়ে দেশকে দেখেন
তারাই ক্ষমতা!
উন্নয়নের সূচক উঁচু
তাতেই কি সব তুষ্ট?
হাড়হাভাতে লিক লিকে সব
নেতা হৃষ্টপুষ্ট!
কিন্তু এসব বলবেনা আর
সেলাই কর মুখটা
খড়গ ঝুলে মাথার ওপর
ফাটুক না হয় বুকটা।
বুদ্ধিজীবী হদ্দবোকা
‘বুদ্ধি বেঁচে খায়’
সেলাই ছাড়া মুখে ওরা
এত্ত সাহস পায়!
হীরক রাজার কথার ওপর
আর কি কথা চলে!
উজবুক সব তবুও দেখ
এটা ওটা বলে।
গণজোয়ার
ঝাণ্ডা হাতে দেশত্রেতা সব
ভাঙ্গলো সবার ঘুম
গণজোয়ার দেখছে নেতা
আন্দোলনের ধুম!
বাচাল ছেলে এসে বলে
আসল নেতা কে?
তুমি হলে ত্রি-নম্বরি
দেখছি ভেজাল যে!
তোমার যুগেও ভোট ডাকাতি
কম কি ছিল দেশে?
টাকা পাচার দুর্নীতিতে
সেরা ছিল কে সে?
গণজোয়ার নাই বা থাকুক
কথার জোয়ার তেজি
জোয়ার-ভাটা পাই না খুঁজে
ঝগড়া সাপ আর বেজি।
নেতা দেখে গণজোয়ার
তোদের চোখে ঠুলি
স্বপ্ন যখন যায় ফুরিয়ে
থাকে শুধুই বুলি।
লাল ঘোড়া
সহিস দেখ ঘুমে আছে
নাকে মেখে তেল
ডাকাডাকি করে সবাই
হচ্ছে রোজই ফেল।
ঘোড়ার মালিক মগডালেতে
নিচ্ছে মজা দেখ
মুখে কি আর যাবে বলা
লাল কালিতে লেখ।
চোখ দুটি ওর অন্ধ রে
নীতির কথা বন্ধ রে-
ঘোড়ার দাপট হাটবাজারে
আনরে লাগাম আন
ঘোড়ার জ্বালায় প্রাণটা গেল
নেই যে সুখের গান।
লোকটা
মাথার ওপর মেলেন ছাতা
তিনি তো নন নেতার হাতা
নিজেই ভীষণ ভালো।
দান-ধ্যানেতে দু’হাত খোলা
তবুও কেমন আত্মভোলা
আর কিছু নেই চাওয়া
মঞ্চ থেকে বলেন তিনি
দেশের তরে সুখটা কিনি
এটিই আমার পাওয়া।
ছড়িয়ে দিলেন গন্ধ মাখা ফুল
নেই কোথাও মৌমাছিদের হূল
সুখের স্রোতে ভাসছি দেখ সবে
আসবে আলো রাত পোয়ালে তবে।
হঠাৎ দেখি মুখোশ খুলে
মুখটা ধরেন একটু তুলে
মিশ মিশে খুব কালো
নয়তো মোটে ভালো।
রাত পোয়াতে যায়না তাকে পাওয়া
কেমন করে হলেন তিনি হাওয়া!
চেটেপুটে সব নিয়েছেন
মুখে ভারি রং দিয়েছেন
নিখোঁজ হলেন এক্কেবারে তিনি।
এখন তাকে কিসের দামে কিনি?
নিজের ঘরের সব দিয়েছি তাকে
এবার দেখ পরছি সবাই পাঁকে
ফুলের সুবাস আর পাব না নাকে।
আড়ি
ভাবছি আমি লিখবো না আর ছড়া
চিন্তার খুব চলছে এখন খরা।
‘দলে’র সাথে হাত মেলালে দেখি!
তোমার লেখায় হুল ফুটে খুব গায়ে
মাঝ নদীতে দুলুনি দাও নায়ে।
‘দলে’র ভাইটি গাল ফুলিয়ে এসে
“কী হয় যদি লেখ ভালোবেসে”!
নাই বা দলের হাজারটা ভুল আছে
তাই বলে কি যাবে ‘লীগের’ কাছে?
জন্মাবধি লীগ-ই তো মোর চেনা
আমি তো নই গোলাম কারো কেনা!
মাটি ফুঁড়ে বেরুনো তোর দল
গুলি-বারুদ দিলো তোদের বল।
একটুখানি বলছিস কি সরি?
কেমনে বলিস তোদের সেলাম করি!
লীগের গাড়ি লাইনে কি আর চলে
কত কথা বলছে কত ছলে।
সোজাসুজি সে কথাটি কওয়া
খুব সহজেই দেশ বিরোধী হওয়া।
মুক্তভাবে কথা বলা সোজা?
মাথা সবার ঘাড়ের নীচে গোজা।
কে যে কখন রং ছুড়ে দেয় গায়ে
কখন কেমন বেড়ি পরে পায়ে!
তারচে ভালো যাই চলে যাই বাড়ি
লেখার সাথে হোক না আমার আড়ি।